Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

স্বাগতম চরসেনসাস ইউনিয়ন তথ্য বাতায়নে, ওয়েব সাইডটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ, তথ্য হালনাগাদ ও এর মান উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ রইল।


বাল্য বিবাহের কুফল

একটি সুস্থ জাতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা, বলেছিলেন প্রখ্যাত মনিষী ও দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। অথচ আজ এই একুশ শতকে এসেও বাংলাদেশের ৬৬% মেয়ে এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যার প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ । আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্য বিবাহ একটি বড় বাধা।

বাল্য বিবাহের কারনসমূহ:

১ : যারা বাল্য বিবাহে ইচ্ছুক তারা যে কোন উপায়ে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ের বয়স টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধি করে নেয় ।এর ফলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে ।                                                                             
২: এক্ষেত্রে কিছু কাজীও দায়ী থাকে এবং এরা মেয়ের বয়স বৃদ্ধি দেখিয়ে বিয়ে দিতে বর এবং কনে পক্ষকে সহায়তা করে।                                                                                                                      
৩: সাধারনত মেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করে ছেলেদের পরিবার।
৪: কখনও কখনও তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা থেকেও বাল্য বিবাহের দিকে ঝুকে পড়ে গ্রাম্য পরিবারগুলো। উল্লেখযোগ্য এই কারনগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারনেই বাল্য বিবাহ দেওয়া হচ্ছে ।                               
   বাল্য বিবাহের প্রধান কুফলঃ                                                                                   
  ১.নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারনে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷  মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে   একজন মা মারা যাচ্ছেন।                                                                                               
  ২. প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক৷  নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানষিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়৷                                                                                                 
  ৩. অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে৷                                                               
   ৪.বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়৷ ।         
   ৫. বাল্যবিবাহ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, পারিবারিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনেও সহায়ক হয় । যেমন, শিক্ষার আলো এবং স্বাস্থ্যগত কারণে অল্প বয়সের মেয়েটি তার নিজের সম্পর্কে সচেতন নয়, সুতরাং পরিবার সম্পর্কে তার ধারণা না থাকায় স্বাভাবিক বিষয়।

বাল্য বিবাহের প্রভাব:

  ১. স্বামী, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির থেকেও তার উপর চাপের সৃষ্টি হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতন।                                                                                          
  ২. এই পারিবারিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হয় পরিবারের সবাই, বিশেষ করে শিশুরা ভোগে নানা মানসিক অশান্তিতে ।এতে তাড়া লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়, পরিবারের প্রতি জন্মে নানারকম অনীহা, ফলে তাড়া পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নানারকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে ও মেয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লংঘিত হয়, যা তাঁকে তার সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ করে।  
  ৩. বাল্য বিবাহ একদিকে আইন এবং সংবিধানের লংঘন, অন্যদিকে বাল্য বিবাহের বর ও কনেকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়।                                                                               
 
৪. অপরিনত বাড়ন্ত পুষ্ঠিহীন শরীরে বেরে উঠে আরেকটি অনাগত ভবিষ্যত অপুষ্ঠিগত অভিশাপের বোঝা নিয়ে। জন্ম দিবে কিছুদিন পর আরেকটি অপুষ্টিতে আক্রান্ত প্রজন্ম। বেড়ে চলে মা ও নবাগত শিশুর জীবনের ঝুঁকি।

ব্যথর্তা:
আমরা আমাদের কাউন্সেলিং, এ্যাডভোকেসি কার্যক্রমকে কিশোরীদের এবং তাদের মায়েদের দোর ঘোরার এখনও সফল ভাবে পৌঁছে দিতে পারিনি। সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম গুলো, সুন্দর সুন্দর পরিকাল্পনা গুলো শুধু কম্পিউটারের মনিটরে সুদৃশ্য দেখাচ্ছে – সুন্দর আর সৌন্দর্যের অনুভূতি গুলো সেই সব সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মাঝে পৌছে দিতে পারছিনা। আমাদের হাটতে হবে আরো অনেক অনেক পথ – বহু যোজনের পথ।
অনিয়িন্ত্রিত সম্পর্ক বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা উদ্ধিস্ব হয়ে কিশোরী মেয়ের বিয়েটাকে সমাধান হিসাবে দেখেছেন। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন ভারাস “ইভ টিজিং”।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা গুলো যে সব কর্ম এলাকায় কাজ করে – যেখানকার বস্তি, গ্রাম কিংবা শহরে এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন জায়গা গুলোতে দেখা যায় অপরাধ প্রবনতার সর্বোচ্চ ধারাবাহিকতা। সেখানকার পরিশেটাই এমন – ঘর থেকে বেড়োলেই মেয়েটা বখাটেদর উৎপাতের মুখোমুখি হবে। তাই সবক্ষেক্রে আমরা অভিভাবকদের দোষারোপ করাটাও আমাদের জন্য যুত্তিযুক্ত হবেনা। অনেক সময় কিশোরী মেয়েটি হয়তো বাবা-মার শাসনে সম্মতি দেয় বিয়েতে – নতুবা বেদে নেয় আত্মহননের পথ। কিন্তু এটাই কি সমাধান ? আমরা কি কিছু ভাবছি ? বিয়েটাকে আমরা সহজলভ্য করে তুলছি বাস্তবতার নিরীখে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিশোরী মেয়েটির স্কুল ও সামাজিকীকরনের স্বাভাবিক বিকাশ। এমনও দেখা গেছে – জন্ম নিবন্ধন সনদে মেয়ের বয়স আসল জন্মতারিখের চেয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে যাতে করে দ্রুত বিয়ে দেয়া যায়। বা শিশুর মনস্তাত্বিক ও সাধারন আচরনে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা গুলো শিক্ষা কার্যক্রমে শিশু শিক্ষাকে যুগোপাযোগী ও আনন্দময় করে তোলার জন্য সর্বান্তক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শিশু সুরক্ষার ব্যাপারে পারিবারিক পর্যায়ে কতটুকু সে নিরাপদ ও সুরক্ষিত তার খবর আমরা রাখছিনা।

বাল্যবিবাহের তথ্য:

১. জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে ।মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে – মাত্র একহাজার টাকার দেনমোহরে বিয়ে হচ্ছে এই সব সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের যাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে – কোন দেন মোহরই ধার্য করা হয়নি এমনকি বিয়ের রেজিষ্ট্রেশনও করা হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে বড় অংকের যৌতুক দাবী করছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির পরিবার।                                                                                                               
২. ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০-১৯ বছর বয়সের দুই তৃতীয়াংশ কিশোরী বাল্য বিবাহের শিকার হয় ।
৩. সেভ দ্যা চিলড্রেন এর ২০১০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ৬৯ শতাংশ নারীর ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ।
৪. জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের হার ২০০৯ সালে ছিল ৬৪ শতাংশ, যা ২০১১ সালে এসে দাড়িয়েছে ৬৬ শতাংশে।                                                                     
৫. বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে নারীর বিয়ের গড় বয়স ১৫ বছর ৩ মাস ।
৬. ইউনিসেফের পাপ্ত তথ্য মতে দেশে আঠারো বছর পূর্ন হবার আগে বিাহের হার ৬৬% এবং ১৫ বছরের আগে বিবাহের হার ৩২%।    ৭. বাংলাদেশে গর্ভবতি নারীদের মধ্যে ৫৭% বয়স উনিশ এর নিচে। বাল্য বিয়ের কারনে ৪১% মেয়ে স্কুল ত্যাগ করে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের উপায়ঃ                                                              
১. বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনটি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচার/প্রচারনা করা প্রয়োজন৷                             
২. রেডিও, টেলিভিশনে ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করা যেতে পারে৷ 
৩.  গ্রাম পর্যায়ে উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশ এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ করা যেতে পারে৷                                                                           
৪. জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যতীত কোন অবস্তুায়ই নিকাহ রেজিষ্টার যেন বিবাহ নিবন্ধন না করেন, সেরূপ আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে৷                                                                                      
৫. প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যেতে পারে৷                                   
৬.  নবম ও দশম শ্রেনীর পাঠ্য বইতে এ বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হলে এর সুফল পাওয়া যাবে৷                  
৭. জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বেসরকারী সংস্তুাগুলোও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে৷

আমরা যারা উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছি- পরিসংখ্যান ও বাস্তবতার দিক থেকে সফলতা দেখালেও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে শিশু বয়সী মেয়েদের বিবাহের মাত্রা সামাজিক অস্থিরতা, নিরাপত্তার অভাব, বেকারত্ব, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা, পারিবারিক ভাঙন ও অবক্ষয়ের কারনে। যে সব সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা স্কুলগামী হচ্ছে তারা ঝরে পড়েছে এবং তাদেরকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে একটা অনিশ্চত জীবনের দিকে। একটি স্কুলে যদি শিশুবান্ধব পড়ার পরিবেশ থাকে তাহলে সেই শিশুটি কিছুতেই তার স্কুল পরিত্যাগ কিংবা অনীহা থাকার কথা নয়। আমাদেরকে সেই কার্যকারণ খুঁজে বের করতে হবে। দেখতে হবে শিশুবান্ধব স্কুলের জন্য যে যে অপরিহার্য শর্ত রয়েছে তা আছে কিনা।

এই প্রয়াসে আমাদের জানা প্রয়োজন “শিশুবান্ধব স্কুল” (Child Friendly School)কি? কি কি বিষয়ের উপর আমাদের নজর দিতে হবে। আইনকে কার্যকর করার সাথে সাথে মেয়ে শিক্ষার সুফল প্রকাশ্যে দেখানোর জন্য যে কোন ভাবে সরকারের আরো উদার নীতি গ্রহন করার প্রয়োজন । গ্রাম্য কৃষি উন্নয়নে শিক্ষিত মেয়েদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো, স্বাস্থ্যখাতে মেয়েদের আরো সম্পৃক্ততা এবং শিক্ষার হার বাড়ানোতে মেয়েদের মেধা কাজে লাগিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করায় মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে । মেয়েদেরকে এবং অসহায় পরিবার সমুহকে বাল্য বিবাহ থেকে মুখ ফেরাতে হলে অবশ্যই মেয়েদের আত্ননির্ভরশীল করার প্রতি জোর দিতে হবে । এজন্য গ্রামে গ্রামে কারিগরি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষন পদ্ধতি চালু করা খুবই কার্যকরি পদক্ষেপ হতে পারে । ইলেক্ট্রনিক পন্যের প্রসারে কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে মেয়েদের আত্ননির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে ।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ রোধ আমাদের ভূমিকা ও কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। আমরা সফল ভাবে তৃমমূল র্পযায়ে এ্যাডভোকেসী করতে পারছিনা। বাবা –মায়ের দারিদ্রতা, বেকারত্ব, ও সামাজিক নিরাপত্তার কারনে বারো বছর বয়সী মেয়েটাকে বিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ না কররাই কথা। সেখানে ব্যথতার দায়ভার আমাদের ; আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার।

বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন : ১৯২৯ অনুযায়ী কোন এক পক্ষ কর্তৃক উল্লেখিত বয়স পূর্ণ না হলে তা বাল্য বিবাহ বলে গন্য হয় এবং উক্ত বিবাহ ব্যাবস্থাপনার দায়ে ব্যবস্থাপকদের ১ মাসের ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।যাই হোক বাল্য বিবাহের উদ্বেগজনক এ পরিণতি যেহেতু পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর সেহেতু তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন হয়।                                                                       একটি শিশু যখন স্কুলে আসে – সেই সময়টিতে শিশু নাচে, গানে ও বিভিন্ন আনন্দ পূর্ন শিক্ষা উপকরনের মাধ্যেমে সহপাঠীদের নিয়ে দারুন উল্লসিত থাকে। চিকিংসা, টিফিন, শিক্ষা উপকরন, পোষাক সবই পেয়ে থাকে একটি শিশু। স্পন্সরশীপ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় চিঠি, কার্ড ও বিভিন্ন পুরষ্কার পেয়ে থাকে। বিনোদনের অংশ হিসেবে অংশ গ্রহন করে বিশাল এক আর্টওয়ার্ক ক্যাস্পেইন – এ।    কিন্তু সকাল বেলায় যে শিশুটি বস্তি থেকে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে এসে হাজির হয় – মিশে যায় বন্ধুদের সাথে এক আনন্দের রাজ্যে। ভুলে যায় তার ক্ষুধা তৃষ্ণা। স্কুল থেকে বাসায় গিয়ে কি সে খাবার খেতে পারবে ? না কি না খেয়ে মায়ের বকুনী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অনাদরে । না কি স্কুল ব্যাগ রেখে বেড়িয়ে পড়ে কাগজ কুড়াতে। খুঁজতে থাকে ফেলে রাখা পলিথিন,ডাস্টবিনের আবর্জনার মূল্যবান কিছু – যা দিন শেষে মূল্য দাঁড়ায় দশটাকা। মায়ের হাতে সেই টাকা তুলে দিলে কমে কিছুটা অভাবের সংসারে বকুনীর মাত্র। কেউবা কাজ করে সিলভার কিংবা ব্যাটারী শিল্পের ঝুকিপূর্ন দূষনযুক্ত কাজে। শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে সে খবর রাখাটারও এখন আমাদের জন্য জরুরী।
স্কুলে দেয়ালে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিংস, আনন্দময় শিক্ষার যাবতীয় উপকরণ পুষ্টিকর টিফিন শিশুটির জন্য সহজলভ্য হলেও আরও মনোযোগী হওয়া জরুরী শিশুর আশপাশ ও তার পরিবারের দিন যাপনেও।

শিশুদের আনন্দময় শিক্ষার জন্য শিশুস্কুল যেমন জরুরী, তেমনি শিশুর সুরক্ষার জন্য নীতিমালা গুলোর বাস্তবায়নও জরুরী।এই মূহুর্তে আমাদের প্রয়োজন সুবিধবঞ্চিত অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের নূন্যতম যে মৌলিক মানবিক চাহিদা গুলো রয়েছে – তার কিয়দংশ হলেও বাত্তবায়ন করা। পাওয়ার জন্য তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। পেশাগত দিকের পাশাপাশি আমরা ব্যক্তিগত ভাবেও অসমতা কিছুটা কমাতে পারি।

আপনার বাসায় যে কাজের ছোট্র মেয়েটি কাজ করছে। তার পড়াশোনার ভার আপনাকেই নিতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতি রোধ করতে আপনিও পারেন আপনার দায়িত্বও টুকু পালন করতে।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে আপনার ইচ্ছাটা যথেষ্ট। যদি আপনি মানবিক হন।
দূর নীল আকাশের সাদা বক উড়তে দেখে শিশুরা যেমন বিশেবিত হয় – একদিন তারা উড়বেই বিকাশিত হবেই – আপনার ভালবাসা প্রয়োজন। “ভালোবাসা পৃথিবীর সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য।

বাল্য বিবাহ একদিকে আইন এবং সংবিধানের লংঘন, অন্যদিকে বাল্য বিবাহের বর ও কনেকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছর পূর্ণ এবং নারীর জন্য ১৮ বছর পূর্ণ হওয়াসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় মেনে চললে তা বৈধ বিবাহ বলে গণ্য হয়। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯, অনুযায়ী কোন এক পক্ষ কর্তৃক উল্লেখিত বয়স পূর্ণ না হলে তা বাল্য বিবাহ বলে গণ্য হয় এবং উক্ত বিবাহ ব্যবস্থাপনার দায়ে ব্যবস্থাপকদের ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নেই।

বাল্য বিবাহের উদ্বেগজনক পরিণতি যেহেতু পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর সেহেতু এটি অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করাসহ আপামর জনসাধারণকে এ ব্যাপারে সচেতন পূর্বক সম্পৃক্ত করতে হবে। আর নতুন আইন প্রণয়নের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনের প্রয়োগ। কারণ আমাদের দেশে আইন আছে; কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

দৃষ্টান্ত: কেশব ২০০৮ সাল থেকেই রংধনু শিশু ফোরামের সদস্য। এখন সে এই সংস্থার সভাপতি। প্ল্যান বাংলাদেশের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা আর অধিকারের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কেশব আর তার দল, নানা জায়গায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যাম্পেইন, বাল্য বিবাহ বিরোধী র্যালি, আর সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আর এজন্য কেশব ও তার দল 'ইউএন ইউথ কারেজ এওয়ার্ড ফর এডুকেশন' পুরস্কার লাভ করে গত ১২ জুলাই মালালা দিবস উপলক্ষে। গর্ডন ব্রাউন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি তোমাদের অভিনন্দন জানাই এই পুরস্কারের জন্য। প্রতিটি ছেলে-মেয়ের স্কুলে যাবার অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছ তোমরা দেখে ভালো লাগছে। আমি তোমাদের যুব সমাজের রোল মডেল ও প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষনা করতে ইচ্ছুক।কেশবের কোনোভাবেই জীবন মসৃণ ছিলো না। নীলফামারীর জলঢাকার কেশব রয়কে খুব অল্প বয়সেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়ালেখা ছাড়তে হয়। জীবনের তাগিদে কাজে নেমে পড়তে হয়। পরে সে-ই এগিয়ে আসে নিজের অপূর্ণতাকে অন্যভাবে পুষিয়ে নেয়ার তাগিদ থেকে। নিজে যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে তাতে যাতে আর কেউ শিকার না হয় সে জন্য কাজ করা শুরু করে সে। তার বাবা অজিন্দ্রা বর্মণ একজন শ্রমিক। মা রঞ্জিতা রায় গৃহিণী। সূর্যমুখীর প্রেসিডেন্ট কাঞ্চন চন্দ্র রায়ের সাথে দেখা হওয়াটা তার জীবনের এক ইতিবাচক মোড়। ২০০৭ সালের পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি, তার বাবা তাকে বাধ্য হয়ে স্কুলে ভর্তি করান। আর কেশব তার দলকে নিয়ে এগিয়ে যায় স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়া আর মেয়েদের অকালে বিবাহ বন্ধ করার লক্ষ্যে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর শ্রম তাকে আজ দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কেশবদের এই এগিয়ে আসাটাই আমাদের জন্য সুখের খবর। এরাই পারবে বাংলাদেশের অন্য রূপ দেখাতে, বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করতে আমাদের ভাবমূর্তি।

শেষ কথাঃ   আমরা আমাদের পরিশীলিত মূল্যবোধ নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমাজের জন্য কত টুকু কাজ করছি, কতটুকু দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিতে পারছি, কতজন অসহায় নারী – শিশুর পাশে দাঁড়াতে পারছি।সরকারের দিন বদলের অঙ্গীকার রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হবে৷ ২০২১ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩.৮ থেকে কমিয়ে ১.৫ করা হবে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা না গেলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না৷ বাল্য বিবাহ সংকুচিত করে দেয় কন্যা শিশুর পৃথিবী৷ আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে কন্যা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে৷ দেশে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে৷ তাই বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ এখন থেকেই৷ আমি চাই বাল্য বিবাহের কারনে মেয়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শিক্ষা না পাওয়া, যৌতুকের বলি হওয়া এবং পরাধিনতার শৃক্ষখলে আর বদ্ধ না হোক । জীবনকে উপভোগ করুক নির্মল আনন্দে । নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানতম বাধা হিসেবেও বাল্যবিবাহকে চিহ্নিত করা যায় । বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে বা মেয়ে সে যাই হক না কেন সে তার উচ্চ শিক্ষা এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হয় । ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিশু, কিশোরী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কিশোররাও উন্নত জীবন ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তিগত তথ্য প্রবাহ থেকে বঞ্চিত। তাই বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের উঁচুস্তর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের; বিশেষ করে আমাদের রাষ্ট্এবং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সবার আগে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে ।

#############                                                                 


  মো মশিউর রহমান রিয়াজ

  নির্বাহী পরিচালক

Educational  Scientific  &  Social Organization (ESSO)

স্বাগতম চরসেনসাস ইউনিয়ন তথ্য বাতায়নে, ওয়েব সাইডটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ, তথ্য হালনাগাদ ও এর মান উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ রইল।